শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১০ অপরাহ্ন
সানোয়ার হাসান সুনু ::
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে ব্রি ২৯ জাতের বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ব্রি ২৮ জাতের ফলনে মাঝে মধ্যে কিছু চিটা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফলন ভাল হয়েছে। হাওর ঘুরে দেখা গেছে নলুয়া, মই, পিংলা ও দলুয়া হাওরে ২৮/২৯ ধানের আবাদ হয়েছে বেশী। তবে পিংলার হাওরে ২৮ ধানের ফলন তেমন একটা ভাল হয় নি বলে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন। সময়মত কিটনাশক না দেওয়া এবং অতিরিক্ত টান্ডাজনিত কারণে এ সমস্যা হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি অফিস জানায়। তবে হাওরগুলোতে জমির পাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। জমির পাকা ধান কেটে মাড়াই করে মাঠে শুকিয়ে গোলায় তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষক-কৃষানীরা। তবে ব্রি ২৯ সহ সকল জাতের ধানের ফলন ভাল হলেও ব্রি ২৮ ধানে প্রথমে ব্লাস্ট রোগে আক্রমনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
জানাগেছে, বিগত বছর হাওর ডুবির ঘটনায় জমির কাচা ধান তলিয়ে যায়। এতে চারদিকে হাহাকার শুরু হয়। এ সময় সরকার দরিদ্র কৃষকদের চিহিৃত করে তালিকা তৈরির মাধ্যমে প্রতি মাসে জনপ্রতি ৩০ কেজি চাল ও নগদ ৫শ টাকা করে দিয়ে সারা বছর সহায়তা করায় তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। এছাড়া সরকারিভাবে বিনামূল্যে কৃষকদের সার ও বীজ সহ বিভিন্ন কৃষি উপ-করণ দেয়ায় এবার কৃষকরা বিগত বছর থেকে বেশি জমি চাষাবাদ করেন। এ সময় বেশি করে জমি চাষাবাদ করতে জগন্নাথপুর কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা হয়। এরপর জমি পরিচর্যা সহ অপেক্ষার পালা শুরু হয়। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়ে ধান কাটা শুরু হয়। বৈশাখের শুরু থেকেই অত্র উপজেলার হাওরগুলোতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধান কাটার মেশিন ও শ্রমিক সংকট থাকায় কৃষকরা আশানুরুপভাবে কাজ করতে পারছেন না।
১৫ এপ্রিল রোববার সরজমিনে দেখা যায়, নলুয়ার হাওর পাড়ের বিভিন্ন গ্রামের মাঠে জমির কাটা ধান স্তুপ করে রেখে তা মাড়াই করে রোদে শুকানো হচ্ছে। রোদে শোকানোর পর ধান গোলায় তুলছেন কৃষক-কৃষানীরা।
তবে ধান পাকার প্রথম দিকে ব্রি ২৮ জাতের ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। এ সময় জগন্নাথপুর কৃষি অফিসের উদ্যোগে ব্লাস্ট রোগ নিয়ন্ত্রনে রোগাক্রান্ত ধানে মেশিন দিয়ে স্প্রে মারা হয় এবং দ্রুত ধান কেটে নিতে উপজেলার বিভিন্ন মসজিদে মাইকিং করে জানানো হয়। এছাড়া ব্রি ২৯ সহ সকল জাতের বোরো ধানের এবার বাম্পার ফলন হওয়াতে কৃষক-কৃষাণী সহ সর্বস্তরের মানুষের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শওকত ওসমান মজুমদার বলেন, এবার জগন্নাথপুরে প্রায় ২৫ হাজার ৩৩৩ হেক্টর বোরো জমি চাষাবাদ হয়। এর মধ্যে ব্রি ২৮ ধানের চাষ করা হয় ৯ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে। এতে সরকারিভাবে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লক্ষ ২৫ হাজার ৩৩৩ মেট্রিক টন ধান। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার লক্ষ্যমাত্রার অধিক ফসল কৃষকদের গোলায় উঠবে বলে আমরা আশাবাদী। তিনি বলেন, প্রথমে ব্রি ২৮ ধানে সামান্য ব্লাস্ট রোগে আক্রমন করেছিল। এ সময় আমরা দ্রুত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহন করি। ভ্রাম্যমাণ কৃষি সেবার মাধ্যামে রোগাক্রান্ত ধানে মেশিন দিয়ে স্প্রে মেরে তা নিয়ন্ত্রন করা হয়। এতে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। সেই সাথে দ্রুত জমির পাকা ধান কেটে নিতে এলাকার মসজিদগুলোতে মাইকিং করে কৃষকদের অবহিত করা হয়।
Leave a Reply